সম্পূর্ণ জীবনে সুখী থাকতে চান? বা সুখ নামক অমূল্য সম্পদকে আকড়ে ধরতে চান? পাঁচটি উপায় প্রয়োজন। হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি! সুখী হওয়ার পাঁচটি সহজ উপায় মেনে চলুন
জীবনে যদি সুখী হতে চান, তবে এই পাঁচটি বিষয় মেনে চলার চেষ্টা করুন। পৃথিবীতে আপনি হবেন সবচেয়ে সুখী মানুষ।
পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি আছেন, যিনি সুখ নামক অমূল্য সম্পদকে আকড়ে ধরতে চাননা! সবাই আকড়ে ধরতে চাই। সবাই চাই সুখী হয়ে পৃথিবীতে বাঁচতে। সবাই চাই সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটাতে। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন প্রতিকূলতা সামনে আসে যে, সুখ নামক অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যায়। জীবনে নেমে আসে বিষণ্নতা। জীবন থেকে হারিয়ে যায় সুখের মুহুর্ত।
আমি আপনাকে বলতে চাই, হ্যাঁ আপনাকেই বলতে চাই। এই পাঁচটি বিষয় মেনে চলুন। হ্যাঁ প্রিয় ভাই ও বোন, আপনি হবেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি।
১. বিশ্বাস
বিশ্বাস এমন একটি জিনিস যা আপনাকে ভরসা করতে শেখায়। আপনার লুকায়িত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিজের প্রতি আস্থা আনতে সাহায্য করে। নিজের প্রতি মনোবল বৃদ্ধি পায়। আপনি লক্ষ্য করবেন যাদের বিশ্বাস দৃঢ় না তারা কোন কাজে সফল হতে পারেনা। হ্যাঁ, সত্যিই তারা কোন কাজে সফল হতে পারেনা।
বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস। তিনিই সব, এই ধারণা মনের মধ্যে আকড়ে ধরা উচিত। মনে করুন, আমরা পৃথিবীতে বাস করি। পৃথিবী তার নিয়মে আবর্তন করছে। তবে কি পৃথিবী এমনি এমনি আবর্তনে করছে? হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, পৃথিবী কি এমনি এমনি আবর্তন করছে?
কখনোই না। অবশ্যই এর পেছনে কেউ আছেন যিনি শুধু পৃথিবীই নয় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। হ্যাঁ এটাই বিশ্বাস রাখুন, যিনি এই মহাবিশ্ব সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালনা করছেন। তিনি ঠিক আপনার জীবনকেও পরিচালনা করছেন। তিনি যেমন এই মহাবিশ্ব সঠিকভাবে পরিচালনা করছেন, তেমনিভাবে আপনার জীবনকেও পরিচালনা করবেন।
এই বিশ্বাসটি মনের মধ্যে বদ্ধমূল করে রাখুন আপনি হবেন সবচেয়ে সুখী মানুষ।
২. লোকে কি ভাববে? লোকে কি মনে করবে?
আপনি কি জানেন, আপনার জীবনের পথচলার ৯০% গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হয় এই বিষয়টির কারণেই। জ্বি ভাই ও বোন আপনাদেরই বলছি। এই একটা বিষয় ভোবেই আমরা আমাদের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে পারছিনা। অথচ একটু ভাবুন, আপনার খাবারের ব্যবস্থা আপনার আমার আব্বু করছেন। তাহলে কেন লোকে কি ভাববে লোকে কি মনে করবে ভেবে শান্তির পথ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি?
কিছু মানুষ হয়তো আপনাকে হিংসা করে, কিছু মানুষ হয়তো আপনাকে অবজ্ঞা করে, কিছু মানুষ হয়তো আপনার পেছনে কথা বলে, আবার কিছু মানুষ হয়তো আপনাকে ছোট ভাবে তাতে কি আপনার কিছু যায় আসে?
তাদেরকে হিংসা করতে দিন, তাদেরকে অবজ্ঞা করতে দিন, তাদেরকে পেছনে কথা বলতে দিন, তাদেরকে আপনাকে ছোট ভাবতে দিন। আপনি শুধু পরিশ্রম করে যান। দেখবেন আপনি যা অর্জন করবেন তা দেখে তারা সবাই চুপ হয়ে যাবে।
প্রিয় ভাই ও বোন আমার, আজ থেকে লোকে কি ভাববে, লোকে কি মনে করবে এই বিষয়টি মন থেকে দূর করে সঠিকভাবে পরিশ্রম করা শুরু করুন। আপনিই হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
৩. নিজের থেকে অন্যকে বড় করে দেখা
প্রিয় ভাই আমার আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে সবচেয় অসুখী মানুষ কারা? আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি। যারা নিজের থেকে অন্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়, তারাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে অসুখী।
আজ তার এটা আছে, ওটা আছে, এটা করলো, ওটা করলো এগুলো ভাবতে ভাবতে আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে দিচ্ছেন। একবারও ভাবছেন না, আপনার জন্য কতো কাজ অপেক্ষা করছে, আপনার জন্য কতো উপায় পড়ে আছে যার মাধ্যমে আপনি একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে আপনার মতো করে সাজাবেন। এই পৃথিবীকে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে।
কিন্তু ভাই আপনি অন্যের মাঝে পড়ে রয়েছেন। বিশ্বাস করুন ভাই, এমনটা হতে থাকলে আপনি কখনোই সুখী হতে পারবেন না। আপনি হতাশার মাঝে নিমজ্জিত হয়ে যাবেন।
প্রিয় ভাই ও বোন, আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন, আজ থেকে আর অন্যের সফলতা দেখে আফসোস করবোনা। আমিই সব, আমি সবকিছু করতে পারি, আমার দ্বারাই সবকিছু করা সম্ভব এই ধারণা মনের মধ্যে নিয়ে আসুন আপনিই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী এবং সফল মানুষ।
৪. অতীত এবং ভবিষ্যৎ ভেবে ভেবে দুঃখ পাওয়া
যা জীবন থেকে চলে গেছে সেটাই অতীত এবং যা জীবনে আসবে সেটাই ভবিষ্যৎ। আমরা অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা চিন্তা করি, যতটা ভাবি তার অর্ধেকটাও বর্তমান নিয়ে ভাবিনা। অথচ আমাদের উচিত ছিল বর্তমানে পরিশ্রম করা।
আপনি আমি জানিনা কতদিন এই পৃথিবীতে থাকব, তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত কেন? এর মানে এটা নয় যে, আপনার কোন স্বপ্ন থাকবেনা। অবশ্যই আপনার সপ্ন থাকবে। কিন্তু সেটা বর্তমানেই পূরণ করতে হবে। বর্তমানেই পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। আমরা টিভিতে বা মোবাইলে যখন কোন জোকস দেখি, জোকসটি দেখার পর কয়বার হাসি? ঠিক একবারই। তাহলে আপনি আপনার জীবনের অতীত নিয়ে প্রতিদিন কাঁদেন কেন?
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানেই আপনাকে কাজ করতে হবে, তবেই আপনি হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
৫. অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা আপনার দুঃখী হওয়ার মূল কারণ। আপনি যখন কারো বড় হওয়া দেখেন তখন আফসোস করতে থাকেন, "আমি কেন তার মতো হতে পারলাম না, সে যা পেয়েছে আমি তা কেন পেলাম না"? এই চিন্তাটাই আপনাকে দুঃখী বানিয়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ প্রিয় ভাই ও বোন আমার, এই চিন্তাটাই আপনাকে সবচেয়ে দুঃখী বানিয়ে দিচ্ছে।
আপনি যখন আপনার চাইতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখছেন তখন ভাবছেন আমি কেন তার মতো হইনি, সে কতো সুন্দর কিন্তু আমি দেখতে একদম বাজে। প্রিয় ভাই ও বোন আমার, মনে রাখুন পরম রব যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনি তাকেও সৃষ্টি করেছেন। এই আকৃতিতে আপনাকে সুন্দর মানিয়েছে। এই আকৃতিতেই আপনাকে অধিক সুন্দর মানিয়েছে। যেখানে স্বয়ং স্রষ্টার আপনার এই আকৃতি সুন্দর লেগেছে সেখানে আপনি কেন আফসোস করবেন, কেন নিজেকে নিয়ে হতাশায় ভুগবেন, কেন নিজের প্রতি জুলুম করবেন, কেন কেন!!!
আপনি হয়তো ভাবছেন সে আমার চাইতে অনেক সুন্দর, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সুন্দর নয়। প্রকৃত সুন্দর তারাই যারা তাদের শিষ্টাচারে সুন্দর, যারা তাদের চরিত্রে সুন্দর, যারা ছোটদের স্নেহ ও ভালোবাসে এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে তারাই প্রকৃত সুন্দর। হ্যাঁ তারাই প্রকৃত সুন্দর।
প্রিয় ভাই ও বোন আমার, আজ এখন থেকেই অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বাদ দিন। ইনশাআল্লাহ আপনিই হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
শেষে আমি আপনাকে বলতে চাই, নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে শিখুন। অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করুন। অন্যের কষ্টে ব্যথিত হউন। গরীব দুঃখীদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিন।
বিশ্বাস করুন, আপনি এমন স্বর্গীয় সুখ পাবেন যা আপনার জীবনকে রাঙিয়ে দেবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশান্তির হাওয়া বইতে শুরু হবে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মনে আপনি থাকবেন, প্রতিটি প্রার্থনায় আপনার জন্য প্রার্থনা করা হবে। আপনি হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর আমরা পাব মহান নেতা।