বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে সমাজে সাধারণত দুই ধরনের লোক পাওয়া যায়।
১. আস্তিক
২. নাস্তিক
এই নিয়েই আজকের প্যারাডক্সিকাল সাজিদ রিভিউ।
আস্তিক তারাই যারা সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন। যারা ভাবেন, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। অবশ্যই! অবশ্যই কেউ আছেন যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। যিনি সকল মানুষের রিযিকের ব্যবস্থা করেন। তিনিই সকলের প্রতিপালক। যিনি পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। দুনিয়াতে সুখ এবং দুখ উভয়টাই তার পক্ষ থেকে আসে এবং এগুলো পরীক্ষার জন্য। যারা এই বিষয়গুলো বিশ্বাস করে তারাই আস্তিক।
অপরদিকে আরেক ধরণের লোক আছে, যারা বিশ্বাস করেন "সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই। আমরা পৃথিবীত এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু দেখি সবকিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কেউ সৃষ্টি করেনি। আমরা প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়েছি। আমাদের কোন প্রতিপালক নেই। আমরাই আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করি। দুনিয়াতে পরীক্ষা বলে কিছু নেয়। পরকাল বলে কিছু নেই সবকিছু পৃথিবীতেই শেষ। ভালো কাজের প্রতিদান স্বরুপ জান্নাত এবং খারাপ কাজের প্রতিদান স্বরুপ জাহান্নাম বলে কিছুই নেই"। এই ধরনের লোকদের নাস্তিক বলা হয়।
আমি আজ আপনাদের মাঝে এই সকল নাস্তিকদের প্রতিত্তোরে একটি বইয়ের রিভিউ করে দেখানোর চেষ্টা করব। যেখানে নাস্তিকরা কিছু প্রশ্ন করে, যার উত্তর যুক্তি সহকারে প্রদান করা হয়েছে।
বই ও লেখকের নাম:
বই : প্যারাডক্সিকাল সাজিদ
লেখক : আরিফ আজাদ
পাবলিকেশন্স : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
প্রকাশের তারিখ : ফেব্রুয়ারী ২০১৭
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি:
লেখক আরিফ আজাদ ১৯৯০ সালের ৭ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। তিনি একজন বাংলাদেশী লেখক। তিনি মূলত প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর লেখক হিসেবেই বহুল পরিচিত।
তার লেখা প্রথম বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২০১৭ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হলে তা ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তারপর থেকে নিয়মিত আরিফ আজাদের অন্যান্য বইগুলো প্রকাশিত হতে থাকে এবং পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে যায়।
প্যারাডক্সিকাল সাজিদের সংক্ষিপ্ত রিভিউ:
প্যারাডক্সিকাল সাজিদ মূলত নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে লেখা একটি যৌক্তিক বই। আরিফ আজাদ শুরু থেকেই বিশ্বাসের কথা লেখেন। তার বিশ্বাসের কথা লেখালেখির মাধ্যমে নাস্তিকদের অবিশ্বাসের জায়গা নড়বড়ে হয়ে যায়৷ অনেক নাস্তিকের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে যায়। তারা তার যুক্তির কাছে হার মেনে যায়।
বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের লড়াই নতুন নয়। সভ্যতার শুরু থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলতে আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ নাস্তিকরা চাই ধর্ম শব্দটি উঠে যাক। এই জন্য তারা কতশত সংগঠন তৈরি করেছে তা বলা দুষ্কর। তারা সেকুলারিজম নামে একটি টার্ম ব্যবহার করে যার মাধ্যমে ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।
বিশ্বাস জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিদিনের কাজে একে অন্যকে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস ছাড়া কেউ চলতে পারিনা। লেখক বিশ্বাসের জিনিসটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। লেখক বইটিতে একজন অবিশ্বাসীর কীভাবে বিশ্বাস আনতে হয় তা যুক্তিসঙ্গত উপায়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সেখানে সাজিদ নামের একজন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইনা যে, "খারাপ কিছু ঘটলেই তা ভালো কেন হবে" এই ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তার প্রতিত্তোরে লেখক ভালো করে বুঝিয়ে দেন এবং শেষে অবিশ্বাসী বিশ্বাস করতে বাধ্য হন।
লেখক এই বইয়ে তাকদির এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, রিলেটিভিটির গল্প, শূণ্যস্থান থেকে স্রষ্টার দুরত্ব, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো, সূর্য পানির নিচে ডুবে, একটি সাম্প্রদায়িক আয়াত, কোরআন মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, ভেল্কিবাজির সাতকাহন, স্রষ্টা কেন মন্দ কাজের দায় নেয় না, তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেনে দেন। সত্যিই কি তাই?, স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন, একটি ডিএনএর জবানবন্দি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মোট ২০ টি অধ্যায় লিখেন। প্রতিটি বিষয়গুলো বুদ্ধিমত্তার সহিত আলোচনা করেছেন যা একজন নাস্তিক আস্তিকের পথে আসতে বাধ্য হবেন। বইটি পড়লে বোঝা যায় নাস্তিকদের যুক্তিগুলো কতটা অযৌক্তিক।
প্রত্যেকটি অধ্যায়ের মূল করা হলো ধর্ম সত্য, স্রষ্টা সত্য, স্রষ্টা আমাদের প্রতিপালক, আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা তিনিই করেন। স্রষ্টাকে বিশ্বাস করতে শেখাই হলো এই বইয়ের মূল শিক্ষা। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, পৃথিবী বা এই বিশ্ববহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে তা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। এগুলো সৃষ্টির জন্য একজন কারিগর রয়েছেন। যিনি সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন।